প্রশ্নঃ আন্তর্জাতিক বিরোধ কাকে বলে? জাতিসংঘ সনদে বিরোধ মীমাংসার বিভিন্ন পদ্ধতি আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ কোন দাবী আদায়ের একটি বিশেষ ব্যবস্থা হলো অবরোধ। এটি কখনো বৈধ আবার কখনো অবৈধ হিসেবে গণ্য হয়। কোন রাষ্ট্র অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে অবরোধ করা যায় । কিন্তু অন্যায় না করলে কোন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবরোধ করা যায় না। এরূপ করলে বেআইনী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
আন্তর্জাতিক বিরোধ ( International Dispute) কাকে বলেঃ মূলতঃ আন্তর্জাতিক বিরোধের কোন সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক আইনে দেওয়া হয় নি। তবে সাধারণ পর্যালোচনায় বলা যায়- দুই বা ততোধিক স্বাধীন দেশের মধ্যে কোন বিষয় নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে তাকে আন্তর্জাতিক বিরোধ বলে।
জাতিসংঘ সনদে বিরোধ মীমাংসার বিভিন্ন পদ্ধতিঃ জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী দুইটি পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক বিরোধ মীমাংসা করা হয়। (১) শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ মীমাংসা, (২) বাধ্যতামূলকভাবে বিরোধ মীমাংসা। নিম্নে এগুলি আলোচনা করা হলো :
(১) শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ মীমাংসা : জাতিসংঘ সনদের ২(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী- সকল সদস্য রাষ্ট্র তাদের নিজেদের মধ্যে আন্তর্জাতিক বিরোধ এমনভাবে নিষ্পত্তি করবে যেন আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় থাকে এবং ন্যায় বিচার বিপন্ন না হয়।
এই সনদের আরো অনেকগুলি অনুচ্ছেদে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তির উল্লেখ রয়েছে। যেমনঃ
crossorigin="anonymous">
style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">
(i) আলোচনার মাধ্যমে : আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তির সর্বোত্তম পন্থা হলো পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা। এই আলোচনা রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে হতে পারে বা পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ে হতে পারে বা কূটনৈতিক পর্যায়ে হতে পারে ।
(ii) অন্য পক্ষের পরামর্শ ও সহযোগিতার মাধ্যমে : তৃতীয় পক্ষের পরামর্শ বা সহযোগিতার মাধ্যমেও বিরোধ নিষ্পত্তি হতে পারে। এক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষ প্রত্যক্ষভাবে কোন আলোচনায় অংশগ্রহণ করে না।
(iii) অন্য পক্ষের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে : তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপেও কখনো কখনো বিরোধ নিষ্পত্তি হতে পারে। অর্থাৎ কোন দেশ বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোন প্রস্তাব দিলে উভয় পক্ষ যদি তা মেনে নেয় তাহলে বিরোধ নিষ্পত্তি হতে পারে।
(iv) তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে : ১৮৯৯ সালে একটি আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন বিরোধের তদন্ত করে উভয়পক্ষের নিকট গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত প্রদান করে।
crossorigin="anonymous">
style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">
(V) সালিশের মাধ্যমে : রাষ্ট্রসমূহ তাদের বিরোধের সুষ্ঠু নিষ্পত্তির জন্য অন্য কোন ব্যক্তি বা পক্ষের উপর দায়িত্ব অর্পণ করলে তাকে সালিশী বলে। এই সালিশের মাধ্যমে বিরোধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসা হয়ে থাকে।
(vi) আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে : আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমেও বিরোধের নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আদালতের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আন্তর্জাতিক আদালত বিরোধ নিষ্পত্তির কোন রায় প্রদান করলে তার বিরুদ্ধে কোন আপীল করা যায় না৷
(২) বাধ্যতামূলকভাবে বিরোধ মীমাংসা : শান্তিপূর্ণ উপায়ে কোন আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব না হলে বৈরী সুলভ কিছু কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করা যায়, যা যুদ্ধ নয়। এগুলিকে বাধ্যতামূলকভাবে বিরোধ মীমাংসা বলে। নিম্নে এই পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো :
(i) অবরোধ সৃষ্টি করে : শান্তিপূর্ণ অবরোধ সৃষ্টি করার মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসা করা না যায়। এক্ষেত্রে যুদ্ধ না করে অভিযোগকারী রাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ উপায়ে অন্যায়কারী রাষ্ট্রের উপকূল অবরোধ করতে পারে।
crossorigin="anonymous">
style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">
(ii) হস্তক্ষেপ এর মাধ্যমে : এক রাষ্ট্র যদি স্বেচ্ছায় অন্য কোন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরী বিষয়ে জড়িয়ে পড়ে তাহলে তাকে হস্তক্ষেপ বলে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কোন রাষ্ট্র এককভাবে বা একাধিক রাষ্ট্র যৌথভাবে হস্তক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নিতে পারে এটি জাতিসংঘ সনদ দ্বারা সমর্থিত।
(iii) প্রতি উত্তর : কোন রাষ্ট্র অন্য কোন রাষ্ট্রের অসৌজন্যমূলক আচরণের বা অন্যায় কোন কাজের জবাবে পাল্টা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তাকে প্রতি উত্তর বলে।
(iv) প্রতিশোধ নেওয়া : এক সময় প্রতিশোধ হিসেবে কোন রাষ্ট্রের সম্পত্তি আটক করা হতো বা নাগরিকদের আটক করা হতো। বর্তমানে নৌ মহড়া, বিধি-নিষেধ, বয়কট ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিশোধ নেওয়া হয়।
উপসংহারঃ অবরোধ নিরসনের পন্থা দু'টি। শান্তিপূর্ণ উপায়ে এবং বাধ্যতামূলকভাবে। দু'টি পদ্ধতিই আইনসম্মত হলেও শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবরোধ নিরসন করা হলে তা পরস্পর রাষ্ট্রসমূহের জন্য অধিকতর কল্যাণজনক হয়।
Post a Comment