![]() |
ফৌজদারী ড্রাফটিং বলতে কি বুঝ? কি কি বিষয় ফৌজদারী ড্রাফটিং-এর অন্তর্ভুক্ত? |
প্রশ্নঃ ফৌজদারী ড্রাফটিং বলতে কি বুঝ? কি কি বিষয় ফৌজদারী ড্রাফটিং-এর অন্তর্ভুক্ত? ফৌজদারী মামলা পরিচালনার জন্য কতিপয় মৌলিক ধারণা নিয়ে অগ্রসর হতে হয়- সেগুলি আলোচনা কর।
উত্তরঃ ফৌজদারী ড্রাফটিং : প্রত্যেক দেশেই সিভিল ‘ল' এর তুলনায় ফৌজদারী ‘ল' এর পরিধি ও ব্যাপ্তি অনেক কম। তাই এক্ষেত্রে ড্রাফটিং-এর ক্ষেত্র বেশ সীমিত। এজাহার, আদালতে অভিযোগ দায়ের, বিভিন্ন ধরনের দরখাস্ত, আত্মপক্ষ সমর্থন করে লিখিত জবাব, দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী, পুলিশ রিপোর্ট, কেমিক্যাল রিপোর্ট, মেডিক্যাল রিপোর্ট, আদালতের রায় ইত্যাদির মধ্যেই এ সকল লেখা সীমাবদ্ধ থাকে। ফৌজদারী বিচার প্রক্রিয়ার সাথে যে সকল লেখার প্রয়োজন হয় সেগুলিকে ফৌজদারী ড্রাফটিং বলা হয়৷
ফৌজদারী কার্যক্রমে কতিপয় মৌলিক বিষয়ঃ
(ক) অভিযুক্তকে নির্দোষ মনে করা : ফৌজদারী অপরাধের মূল লক্ষ্য হচ্ছে যে অপরাধ সংঘটিত করে বা এর সাথে যুক্ত থাকে তাকে আইন অনুযায়ী শাস্তি দিয়ে নাগরিকদের শান্তি, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা ৷ কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করালে সে দোষী হয়ে যায় না। তার অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে অপরাধী বলা যাবে না এবং সে একজন নির্দোষ ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হবে। তাই চুরির অভিযোগ আনলেই তাকে চোর বলা যাবে না এবং যতক্ষণ পর্যন্ত চুরি প্রমাণিত না হয় ততক্ষণ তাকে নিরপরাধ বলে গণ্য করা হবে।
crossorigin="anonymous">
style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">
(খ) অভিযোগ প্রমাণ : কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনয়নকারীকে অভিযোগকারী (complainant) বলে এবং যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় তাকে অভিযুক্ত (accused) বলে। অভিযোগকারীকেই প্রমাণ করতে হয় কিভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধ সংঘটিত করেছে। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি কোন ব্যতিক্রমের অজুহাত উত্থাপন করে তাহলে তা প্রমাণ করতে হবে। যেমন, কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে, কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তি দাবী করছে যে সে সময় সে মারাত্মক মানসিক রোগে আচ্ছন্ন ছিল। সেজন্য সে অব্যাহিত পেতে, পারে। এক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তিকেই প্রমাণ করতে হবে যে, উক্ত সময়ে সে মানসিক রোগী ছিল।
crossorigin="anonymous">
style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">
(গ) সন্দেহের অবকাশ : ফৌজদারী বিচারের ক্ষেত্রে আরেকটি অন্যতম নীতি হচ্ছে যে অভিযুক্ত ব্যক্তি শাস্তি দিতে হবে তা, বিরুদ্ধে আনীত অপরাধের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হতে হবে। অপরাধে তার জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে যদি সামান্যতম সান্দেহের অবকাশ থাকে তাহলে তাকে শাস্তি দেয়া যায় না। সার্বজনীনভাবে একটা স্বীকৃত নীতি হচ্ছে যে, It is better that ten guilty persons should escape punishment's rather than one innocent should suffer. অর্থাৎ একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদানের চেয়ে দশজন দোষী ব্যক্তিকে শাস্তি না দেয়া শ্রেয়। অন্যভাবে বলা যায় যে, একজন দোষী ব্যক্তিকে শাস্তি না দেয়া অন্যায় কিন্তু তার চেয়ে বেশি অন্যায় হবে যদি একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়। একটি খুনের মামলায় হাইকোর্ট বলেন যে, সন্দেহের ক্ষীণ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে হেতু আসামীকে খালাস দেয়া হয়। কিন্তু আপীল বিভাগ বলেন যে, ক্ষীণ সম্ভাবনার কোন যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি নেই। সন্দেহের যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি থাকতে হবে। তাই হাইকোর্ট বিভাগের রায় পরিবর্তন করা হয় [৭ বিএলডি (এডি) ২৬৫]।
crossorigin="anonymous">
style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">
(ঘ) মেন্স রিয়া বা দোষী মন (Mens rea) : কোন অন্যায় বা নিষিদ্ধ কাজ যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘটন করে কিংবা অবহেলা ক্রমে করে থাকে তবে তাকে সে কাজের জন্য দায়ী হতে হয়। ইচ্ছাকৃত কাজের ক্ষেত্রে ধরে নেয়া হয় যে, অন্যায়কারীর একটি অসৎ অভিপ্রায় বা দোষী মন ছিল। অবহেলার ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয় যে সংঘটনকারী সাবধানতা অবলম্বনে আইনগত কর্তব্য ভঙ্গ করেছে। কাজেই মেন্স রিয়া হচ্ছে একটা মানসিক উপাদান যা একটি অপরাধ সংঘটনের জন্য আবশ্যকীয় বলে ব্রিটিশ কমন ল'য়ে সর্বদা বিবেচিত হয়েছে। তবে কোন বিধিবদ্ধ আইনে এর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করতে পারে। কেননা এ সকল ক্ষেত্রে বলা হয় যে, কাজটি যদি বেআইনী হয় তবে তার সংঘটনের জন্য দায়ী হতে হবে। এতে সংঘটনকারীর মানসিক উপাদান যাই থাকুক না কেন তা বিবেচ্য বিষয় নয়। তবে সুষ্পষ্টভাবে এর আবশ্যকতা অস্বীকার না করা পর্যন্ত মেনস্ রিয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুমান করা হয়। ১৯৪৬ সালে লর্ড গোড্ডার্ড (62 T.L.R 482 (D.C.)] যে নীতিটি প্রতিষ্ঠিত করেন তা প্রায়ই উল্লেখ করা হয়ে থাকে। তিনি বলেন যে, জনগণের স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, আদালত কাউকে দোষী সাব্যস্ত করবেন না যতক্ষণ না তার একটি দোষী মন থাকে। অবশ্য যদি কোন সংবিধি দ্বারা এর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা হয় তবে তা স্বতন্ত্র বিষয় হবে।
crossorigin="anonymous">
style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">
মেস্ রিয়া মতবাদটি অপরাধ বিজ্ঞানে বেশ আলোচ্য বিষয়। এই মতবাদটি যেমন সকল ক্ষেত্রে সমভাবে প্রয়োগ করা যায় না। তেমন এর প্রয়োজনীয়তা ও সকল ক্ষেত্রে অস্বীকার করা যায় না। যেমন কোন ব্যক্তি যদি তার বাগানে তীর ধনুক চালনা অনুশীলন করে এবং ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কোন ব্যক্তি এর দ্বারা আহত হয় তাহলে কি তীর ধনুক চালনাকারী দায়ী হবে, ‘মেস্ রিয়া'কে অস্বীকার করে শুধু কাজের জন্য দায়ী হলে সে ব্যক্তি অবশ্য দায়ী হবে। কিন্তু যেহেতু আঘাত করার মত দোষী মত এখানে অবর্তমান সেহেতু আঘাতকারী এক্ষেত্রে অব্যাহতি পেতে পারে। আবার গণ উৎপাতের ক্ষেত্রে উৎপাত সৃষ্টিকারীর অন্যের অসুবিধা বা ক্ষতি করার মত ‘মেস্ রিয়া না থাকলেও শুধু কাজটির জন্য তাকে দায়ী করা হয়। স্যার ষ্টিফেন সনের মতে ‘মেন্স্ রিয়া’ মতবাদটি বিভ্রান্তিকর এবং বর্তমানে সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এই মতবাদটির যখন উদ্ভব হয় তখন ফৌজদারী আইনে বিভিন্ন অপরাধের নাম শুধু উল্লেখ থাকতো। বর্তমানে বিভিন্ন অপরাধের স্বতন্ত্র সংজ্ঞা এবং এর উপাদান দেয়া থাকে। তাই বর্তমানে এই মতবাদটি অবান্তর মনে হয় ৷
crossorigin="anonymous">
style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">
(ঙ) অপরিহার্য আইনগুলি ভালভাবে রপ্ত করতে হবে : সাধারণ আইনের মধ্যে (১) ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮, (২) দণ্ডবিধি, ১৮৬০, (৩) তামাদি আইন, ১৯০৮, (৪) সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২, (৫) ক্রিমিনাল রুলস এন্ড অর্ডারস ভলুম ১ ও ২, (৬) সংশ্লিষ্ট কেস ল পুলিশ রেগুলেশন । বিশেষ আইনের মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪, অস্ত্র আইন, ১৮৭৮, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ ইত্যাদি।
Post a Comment