পরোক্ষ নির্বাচনের অসুবিধাসমূহ আলোচনা কর


প্রশ্নঃ পরোক্ষ নির্বাচনের অসুবিধাসমূহ আলোচনা কর। 

অথবা, পরোক্ষ নির্বাচনের কুফল আলোচনা কর।

অথবা, পরোক্ষ নির্বাচনের দোষসমূহ আলোচনা কর।

অথবা, পরোক্ষ নির্বাচনের নেতিবাচক দিকসমূহ আলোচনা কর ৷

ভূমিকাঃ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রাপ্তবয়স্ক জনগণের ভোটাধিকার প্রবর্তনের সাথে সাথে নির্বাচন পদ্ধতি প্রত্যক্ষ হবে না পরোক্ষ হবে তা নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সাফল্য যেমন নির্বাচকমণ্ডলীর আয়তনের উপর নির্ভরশীল, তেমনি নির্বাচন পদ্ধতির উপরও নির্ভরশীল। প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি ও পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। বর্তমানে গণতন্ত্র বলতে পরোক্ষ বা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রকে বুঝায়।

পরোক্ষ নির্বাচনের অসুবিধাসমূহঃ পরোক্ষ নির্বাচনের অনেকগুলো সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। সমালোচকগণ নিম্নলিখিত অসুবিধা বা বিপক্ষে যুক্তির অবতারণা করেছেনঃ

১. অগণতান্ত্রিকঃ পরোক্ষ নির্বাচন অগণতান্ত্রিক বলে বিবেচ্য, কারণ জনসাধারণ চূড়ান্তভাবে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে না এবং জনপ্রতিনিধি ও নির্বাচকদের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠে না। অথচ গণতন্ত্রের স্বরূপ উপলব্ধির জন্য প্রয়োজন জনগণ ও প্রতিনিধির মধ্যে প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপন। অন্যথায় জনগণ প্রকৃত গণতন্ত্রের আস্বাদ পায় না।




style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">


২. রাজনৈতিক শিক্ষাবিস্তারে সহায়ক নয়ঃ
 পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা রাজনৈতিক শিক্ষাবিস্তারে সহায়ক নয়। প্রত্যক্ষ নির্বাচনের সময় জনসাধারণের মাঝে যেমন প্রাণচাঞ্চল্যতা দেখা যায় পরোক্ষ পদ্ধতিতে তা দেখা যায় না। পরোক্ষ পদ্ধতিতে জনগণ ও প্রতিনিধিদের মধ্যে নির্বাচক সংস্থার অবস্থানের ফলে জনগণ রাজনৈতিক সমস্যা ও ঘটনাবলি সম্বন্ধে অবহিত হওয়ার ব্যাপারে উৎসাহবোধ করে না। ফলে রাজনৈতিক শিক্ষা ও চেতনা বিকশিত হয় না।

৩. স্বৈরাচারী সরকারঃ পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে সরকার পরোক্ষভাবে নির্বাচন সংস্থার মাধ্যমে নির্বাচিত হয় বলে শাসক ও শাসিতের মধ্যে সহযোগিতা ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতার পরিবেশ সৃষ্টি হয় না। জনগণ সহজে তাদের দাবি সরকারের কাছে পেশ করতে পারে না। সরকারকে সহজে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, ফলে সরকার স্বৈরাচারী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷

৪. দুর্নীতি বৃদ্ধিঃ অনেকের অভিমত পরোক্ষ নির্বাচনে ব্যাপক দুর্নীতি প্রশ্রয় পায়। নির্বাচক সংস্থার স্বল্পসংখ্যক সদস্যদের উৎকোচ দ্বারা প্রলুব্ধ করে বা ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে দলগুলো চেষ্টা করতে পারে। এছাড়া দলগুলো নানা ধরনের দুর্নীতিমূলক উপায় অবলম্বন করতেও পিছপা হয় না। ফলে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়।

৫. অযৌক্তিক ব্যবস্থাঃ পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থাকে অযৌক্তিক বলে গণ্য করা হয়। এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, জনগণ যদি মধ্যবর্তী নির্বাচকমণ্ডলীর নির্বাচনের উপযুক্ত বলে বিবেচ্য হয়, তাহলে তারা চূড়ান্ত প্রতিনিধি নির্বাচনের অযোগ্য হবে কেননা তা অযৌক্তিক বিষয়।




style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">


৬. জনস্বার্থ অবহেলিত হয়ঃ
 এ নির্বাচন ব্যবস্থায় সরকার পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হয় বলে সরকার জনগণের নিকট দায়িত্বশীল থাকে না। তাছাড়া জনগণ তাদের দাবিদাওয়া সহজে সরকারের নিকট পেশ করতে পারে না। ফলে জনস্বার্থ সংরক্ষিত হয় না।

৭. নির্বাচনী সংস্থার দৌরাত্ম্য: পরোক্ষ নির্বাচনে নির্বাচনী সংস্থার দৌরাত্ম্য পরিলক্ষিত হয়। এতে নির্বাচনী সংস্থার ‘সদস্যরাই প্রতিনিধি নির্বাচন করে। জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের কোন সুযোগ থাকে না। ফলে নির্বাচনী সংস্থার একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

৮. অনীহাঃ পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় জনগণ প্রতিনিধি নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় না, তাই তাদের মধ্যে অনীহার ভাব সৃষ্টি হয়। এতে জনগণের মাঝে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উৎসাহ উদ্দীপনা ও প্রাণচঞ্চল্যতার সৃষ্টি হয় না এবং জনগণ সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে জনগণ পরোক্ষ নির্বাচনের প্রতি অনীহা প্রকাশ করে।




style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">


৯. গণসংযোগ বিরোধীঃ
 পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনী সংস্থা কর্তৃক নির্বাচিত হয় বিধায় জনগণের সাথে তাদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকে না। সরকারের নিকট জনগণ সরাসরি তাদের অভাব অভিযোগ ও সমস্যা তুলে ধরতে পারে না। তাছাড়া সরকার ও জনগণের নিকট কোন কাজের জন্য জবাবদিহি করে না।

১০. দল প্রথার ত্রুটিঃ এ পদ্ধতিতে নির্বাচক সংস্থার সগস্যগণ চূড়ান্তভাবে প্রতিনিধি নির্বাচনের সময় দলীয় নেতৃত্বের দ্বারা অধিক মাত্রায় প্রভাবিত হন। ফলে দল প্রথার ত্রুটিগুলো দূর না হয়ে, বরং বৃদ্ধি পায়। মধ্যবর্তী নির্বাচক সংস্থা থাকার কারণে ভীতি প্রদর্শন, উৎকোচ এবং আরও দুর্নীতিমূলক কাজের আশংকা বেড়ে যায়৷

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিও ত্রুটিমুক্ত নয়। কিছু কিছু অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের অনেক দেশে পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিও এ নির্বাচন পদ্ধতিতে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। তাছাড়া প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার কতিপয় ত্রুটির কারণেও অনেক দেশে পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি গৃহীত হয়েছে।

Post a Comment

Leave a Comment.