প্রশ্নঃ উত্তম নির্বাচন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, উত্তম নির্বাচন পদ্ধতির বিশেষত্ব আলোচনা কর।
অথবা, উত্তম নির্বাচন পদ্ধতির প্রকৃতি বর্ণনা কর।
ভূমিকাঃ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নির্বাচন হলো ক্ষমতা লাভের একটি উপায়। জনগণ ভোটদানের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করে থাকে। আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের আয়তন যেমন সুবিশাল জনসংখ্যাও তেমনি ব্যাপক এবং এর কার্যপরিধি ব্যাপক রূপ ধারণ করেছে। আর এ নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করেন। গণতন্ত্র এবং নির্বাচন ব্যবস্থা অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। গণতুন্ত্রের সফলতার জন্য উত্তম নির্বাচন পদ্ধতি অত্যাবশ্যকীয়।
উত্তম নির্বাচন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যসমূহঃ গণতান্ত্রিক শাসনে নির্বাচন একটি নির্ধারণী ক্ষমতা অর্থাৎ যারা জনসাধারণের রায় পাবে তারা শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকবে। উন্নত অনুন্নত নির্বিশেষে সকল রাষ্ট্রেই নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার তথা উত্তম নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও গবেষণা চলে আসছে। নির্বাচন উত্তম না হলে এর কোন গুরুত্ব থাকে না। নিম্নে উত্তম নির্বাচন ব্যবস্থার কতিপয় পূর্বশর্ত বা বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলোঃ
১. সর্বজনীন ভোটাধিকারঃ সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমেই উত্তম নির্বাচন পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এ ধরনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কেননা এটা জনসাধারণের মৌলিক অধিকার। নির্বাচন উত্তম হবে তখনই, যখন সেখানে সর্বজনীন ভোটাধিকার থাকবে। কুয়েতসহ আরো কিছু দেশে আজও মহিলাদের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয় নি। তাই ঐসব দেশে নির্বাচন যত ভালোই হোক না কেন তাকে উত্তম নির্বাচন বলা যায় না।
crossorigin="anonymous">
style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">
২. প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিঃ নির্বাচন প্রত্যক্ষ হওয়া আবশ্যক। এ নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনগণ সরাসরি তাদের প্রতিনিধি বাছাই করতে পারে এবং প্রার্থীদের ভালোমন্দ, যোগ্যতা অযোগ্যতা বুঝতে পারে। ফলে তারা উপযুক্ত প্রতিনিধি বাছাই করার সুযোগ পায়। প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকারের সাথে জনগণের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
৩. সহজ ভোটদান পদ্ধতিঃ সহজ ভোটদান পদ্ধতি উত্তম নির্বাচনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। জনগণ যদি নির্বাচনের কার্যক্রম সহজে বুঝতে পারে, তাহলে তাদের মধ্যে ভোট প্রদানের উৎসাহ সৃষ্টি হয়। জটিল ভোটদান প্রক্রিয়া নির্বাচনের প্রতি জনগণের উদাসীনতার জন্ম দেয়। তাই ভোটদান প্রক্রিয়া সহজ সরল হওয়া আবশ্যক।
৪. গোপন ভোটদান পদ্ধতিঃ প্রকাশ্য ভোটের যত উপকারিতাই থাক না কেন ব্যালটে গোপনে ভোট প্রদান শ্রেয়। ভোট গোপনে না হলে নানা প্রকার শত্রুতার সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া উন্মুক্ত ভোটদান পদ্ধতিতে নির্বাচক (Voter) স্বাধীনভাবে ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়। তাই সর্বোপরি উত্তম নির্বাচনের জন্য গোপন ভোটদান ব্যবস্থা থাকা অতি প্রয়োজনীয়।
crossorigin="anonymous">
style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">
৫. নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রস্তুতঃ উত্তম নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের প্রাক্কালে একটি সঠিক ও নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা প্রয়োজন। ভোটার তালিকায় যাতে প্রাপ্তবয়স্ক ও ভোটার হওয়ার যোগ্য কেউ বাদ না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
৬. একক ভোট পদ্ধতিঃ একক ভোট পদ্ধতি উত্তম নির্বাচনের একটি অন্যতম দিক। এখানে প্রতিটি নাগরিকের একটি মাত্র ভোট স্বীকৃত। ভোটাধিকার একাধিক হবে না। একাধিক ভোটাধিকার থাকলে তা সঠিক প্রার্থী বাছাইয়ে অযথা জটিলতা সৃষ্টি করে।
৭. নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণঃ উত্তম নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকা নির্ধারিত হওয়া আবশ্যক। নির্বাচনী এলাকা যথাসম্ভব ক্ষুদ্র হওয়া এবং অধিক ভোটকেন্দ্র থাকা প্রয়োজন। কেননা এতে প্রতিনিধি ও জনসাধারণের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে।
৮. যোগ্য প্রার্থী নির্ধারণঃ উত্তম নির্বাচনের জন্য প্রার্থীকে অবশ্যই শিক্ষিত, সৎ, যোগ্য ও প্রজ্ঞাবান হতে হবে। প্রার্থী ভালো না হলে নির্বাচনে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। অসৎ প্রার্থীর দ্বারা যে কোন খারাপ ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক।
crossorigin="anonymous">
style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">
৯. সংখ্যালঘুর প্রতিনিধিত্বঃ উত্তম নির্বাচন হতে হলে সংখ্যালঘুর যথাযথ প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। সংখ্যালঘুর প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন ব্যবস্থাকে কার্যকরী ও যৌক্তিক করে তোলে। আইনসভার সকল শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণের মাধ্যমেই নির্বাচন ব্যবস্থা উত্তম হবে।
১০. সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশঃ উত্তম নির্বাচনের অপরিহার্য পূর্বশর্ত হলো সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি। নির্বাচন যাতে কালো টাকার মালিক, অসৎ ও দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিবিদ, সুযোগ সন্ধানী আমলা ও ব্যবসায়ী, পেশীশক্তি প্রদর্শনী গডফাদার যাতে উৎকোচ প্রদান এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে সহজ সরল ভোটারদের বিভ্রান্তি করতে না পারে নির্বাচন কমিশনকে সে ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। অন্যথায় উত্তম নির্বাচন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
১১. নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকাঃ নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী, নিরপেক্ষ ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। উত্তম নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনই যাবতীয় নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
crossorigin="anonymous">
style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">
১২. আদালতের নিরপেক্ষ ভূমিকাঃ উত্তম নির্বাচনের জন্য আদালতের নিরপেক্ষ ভূমিকা প্রয়োজন। নির্বাচন সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসা, আচরণ বিধির লঙ্ঘন কিংবা প্রচারকার্যের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে নির্বাচনের প্রাক্কালে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
১৩. উন্নত আইনশৃঙ্খলার ব্যবস্থাঃ নির্বাচনকে আদর্শস্থানীয় করতে হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। সেজন্য পুলিশ, বি.ডি.আর, সেনাবাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী এমনকি রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারেরও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা এককভাবে কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
১৪. নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রণয়ন ও তার কঠোর প্রয়োগঃ উত্তম নির্বাচনের জন্য একটি আচরণ বিধি প্রণয়ন এবং তার কঠোর প্রয়োগের ব্যবস্থা থাকতে হবে। নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীদের করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট নীতি থাকা অত্যাবশ্যক। আর এ নীতি বা আচরণ বিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির বিধান থাকতে হবে।
crossorigin="anonymous">
style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">
১৫. ভোটকেন্দ্রের আধিক্যঃ সাধারণত উত্তম নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র অধিক হয়। রাষ্ট্রের আয়তন ও জনসংখ্যা অনুযায়ী অধিকসংখ্যক ভোটকেন্দ্র থাকা উচিত। কেননা ভোটকেন্দ্র অধিক হলে জনগণ খুব সহজেই নিকটস্থ স্থানে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। ফলে জাল ভোটের কোন আশঙ্কা থাকে না।
উপসংহারঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, গণতন্ত্রের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নির্বাচন অত্যাবশ্যক। নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহে প্রতিনিধিগণ নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করে থাকেন। আর কেবল উত্তম নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতন্ত্রের সুষ্ঠু বিকাশ সাধিত হয়। তাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো বর্তমানে উত্তম নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। তাছাড়া উত্তম নির্বাচন ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকারের বৈধতা নিশ্চিত হয়।
Post a Comment