আইন অনুযায়ী বিচার বলতে কি বুঝ?


প্রশ্নঃ আইন অনুযায়ী বিচার বলতে কি বুঝ? সংক্ষেপে এর সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ ব্যাখ্যা কর।

আইন অনুযায়ী বিচারঃ আধুনিক সমাজে প্রতিটি রাষ্ট্রের আইন প্রণয়নের সংস্থা রয়েছে এবং প্রণীত আইন প্রয়োগ করার জন্য বিচার বিভাগ রয়েছে। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে এই আইনবিশ্লেষণ ও প্রয়োগ করে থাকেন। নির্দিষ্ট আইনের অবর্তমানে বিচারকগণ স্বীয় বুদ্ধি বিবেচনা দ্বারা বিচারকার্য সম্পন্ন করে থাকেন। তবে ব্যক্তিবিশেষের বিচার বুদ্ধি ও বিবেচনার উপর নির্ভর করে বিচার কার্য সম্পন্ন করলে তা প্রশ্নাতীত হয় না এবং যেহেতু সকল বিচারকের বিচার বুদ্ধি ও বিবেচনা এক নয় তাই বিচারপ্রার্থীরাও সকল ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার পায় না। তাই যতদূর সম্ভব সকল ক্ষেত্রে বিস্তৃত বিধিমালা প্রণয়ন করা বাঞ্ছনীয়। যে ক্ষেত্রে একান্তই বিচারকের সুবিবেচনা প্রয়োগ করতে হয়, সেক্ষেত্রে ন্যায়বিচারের স্বার্থে কিছু নীতিমালা অনুসরণ করতে হয়। 




style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">


এইভাবে ইংল্যাণ্ডে চ্যান্সেরী আদালতের গঠন হয় এবং ন্যায়পরতা বা ইকুইটির নীতিমালার সৃষ্টি হয়। বর্তমান যুগে যদিও নির্দিষ্ট ও নির্ধারিত বিধির অস্তিত্ব আইন অনুসারে বিচার প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত, তবুও বিচারকের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতায় ন্যায়পরায়ণতা ভিত্তিক আচরণকে অস্বীকার করা যায় না। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, ফৌজদারী অপরাধের ক্ষেত্রে আসামীকে জামিনে মুক্তি দিবার বিষয়টি বিচারকের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাভুক্ত। কিন্তু এ ক্ষমতা প্রয়োগকালে যদি কোন নীতি বা বিধি অনুসরণ না করা হয় তবে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা স্বেচ্ছাচারে পরিণত হবে এবং বিচার প্রার্থীরা বিচারকের নিকট হতে সমান আচরণ পাবে না। ফলে তাদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হবে এবং সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠায় বিঘ্নের সৃষ্টি হবে। তাই আইন অনুযায়ী বিচার বলতে শুধু নির্দিষ্ট ও লিখিত আইনের প্রয়োগ
 বুঝায় না, বিচারকের স্বীয় বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট নীতিমালার অনুসরণ বুঝায়। আদালতের সকল বিচার কার্যই আইন অনুসারে হতে হবে— এটাই হচ্ছে আইন অনুযায়ী বিচারের মূল কথা।




style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">


আইন অনুযায়ী বিচার এর প্রধান সুবিধা হচ্ছে যে, এক্ষেত্রে বিচারকের স্বাধীনতা সীমিত। আইনের বিধান অনুসারে তাঁকে কাজ করতে হয় বিধায় স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করা যা পরবর্তীকালে স্বেচ্ছাচারে পরিণত হতে পারে— তার সুযোগ সেরূপ থাকে না। এছাড়া বিচার প্রার্থীগণও আইনের বিধান দেখে তাদের অবস্থান বুঝতে পারে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে আইন অনুযায়ী বিচার অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। কিন্তু এর কিছু বাস্তব অসুবিধা রয়েছে। সমাজে বসবাসকারী মানুষের বিচিত্র কর্মকাণ্ডের মধ্যে অনেক বিচিত্র ও নতুন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যার বিধান প্রচলিত আইনের মধ্যে না-ও থাকতে পারে। 

এক্ষেত্রে বিচারককে যদি আইনের গতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয় তবে বিচারপ্রার্থীরা ন্যায় বিচার হতে বঞ্চিত হতে পারে। এ সকল কারণে ইংল্যান্ডে কমন ল' এর পাশাপাশি ইকুইটির উদ্ভব হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রে কোন অপরাধ সম্পর্কে বিচারকের বাস্তব জ্ঞান থাকলেও আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে তাকে সাক্ষ্য প্রমাণ দ্বারা বিচার কার্য সমাধা করতে হয় অর্থাৎ আইনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই তাকে চলতে হয়। পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত না হলে বিচারকের ব্যক্তিগত জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও সে মর্মে রায় দিতে পারেন না।

Post a Comment

Leave a Comment.