“আইনবিজ্ঞান সমাজ পরিচালনার প্রকৌশলগত বিজ্ঞান”— ব্যাখ্যা কর


প্রশ্নঃ 
“আইনবিজ্ঞান সমাজ পরিচালনার প্রকৌশলগত বিজ্ঞান” ব্যাখ্যা কর

উত্তরঃ “আইনবিজ্ঞান সমাজ পরিচালনার প্রকৌশলগত বিজ্ঞান”— এই উক্তিটি করেছেন প্রখ্যাত মার্কিন আইনবিজ্ঞানী ডীন রস্কো পাউণ্ড। মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে আইন। সমাজে বিভিন্ন পেশার বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন চরিত্রের মানুষ বাস করে। তাদের বিভিন্ন কার্যকলাপে স্বার্থের সংঘাত হওয়া স্বাভাবিক। এই সংঘাত পরিহার করে সামাজিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে আইনের প্রয়োজন। তাই সমাজের মঙ্গলের জন্যই আইন। এই আইন সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান লাভ করতে হলে আইনবিজ্ঞান সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ছাড়া আইন প্রণয়ন বা আইন প্রয়োগ করলে সামাজিক মঙ্গলের পরিবর্তে সামাজিক বিশৃংখলার সৃষ্টি করতে পারে। 




style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">


একজন প্রকৌশলী প্রকৌশলগত জ্ঞান ও পেশাগত দক্ষতা অর্জন করে সমাজে নিজ ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন প্রকৌশলী যখন সেতু নির্মাণ করে তখন অবশ্যই তাঁকে সংশ্লিষ্ট বস্তুর গুণাবলী এবং এগুলির রাসায়নিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখতে হবে। তার জ্ঞান অসম্পূর্ণ থাকলে সেতুটি ভালভাবে নির্মিত হবে না এবং সমাজের লোকের উপকারের পরিবর্তে আরো ক্ষতিসাধন করবে।

একজন আইনবিজ্ঞানী এবং একজন প্রকৌশল বিজ্ঞানী উভয়ই তার নিজ নিজ ক্ষেত্রে সমাজ পরিচালনায় অবদান রাখে। আইনবিজ্ঞানী আইন প্রণয়ন করে মানুষের বাহ্যিক আচরণকে নিয়ন্ত্রিত করে সামাজিক বিশৃংখলা হতে রক্ষা করে, প্রকৌশল বিজ্ঞানীও তার কারিগরী ও পেশাগত জ্ঞানের আলোকে সামাজিক জীবনকে সহজ ও আরামদায়ক করে। উভয় ক্ষেত্রেই অপর্যাপ্ত ও অপরিপক্ক জ্ঞান মানুষের কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণ ও ধ্বংস ডেকে আনে।




style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">


ব্যক্তিস্বার্থের সাথে সামাজিক স্বার্থের সমন্বয় সাধন, স্বার্থ সংঘাত নিষ্পত্তি করণ, অধিকার ও কর্তব্যের ভারসাম্য সংরক্ষণ ইত্যাদির জন্য আইন হচ্ছে একটি সামাজিক প্রক্রিয়া বিশেষ। সামাজিক সমস্যার অন্বেষণ, চিহ্নিতঃকরণ এবং এর সমাধানের মধ্যেই আইনের সার্থকতা নিহিত। আইনের এই প্রয়োগকে রস্কো পাউণ্ড প্রকৌশলগত কর্মকাণ্ডের সাথে তুলনা করেছেন। বস্তুর গুণাবলী এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ অন্বেষণ দ্বারা প্রকৌশলগত বিজ্ঞান সমৃদ্ধ, শৃংখলিত এবং ক্রমবিন্যাসিত হয়েছে। অনুরূপ ভাবে, বস্তুনিষ্ঠ অন্বেষণ দ্বারাই আইনবিজ্ঞানের সূত্রগুলি ক্রমবিন্যাসিত ও শৃংখলিত হয়েছে। এগুলির অনুধাবন ও প্রয়োগের জন্য এ সকল সূত্র সম্পর্কে পরিপক্ক জ্ঞানের প্রয়োজন। 

পাউণ্ডের সমর্থনে আইহেরিং (Ihering) বলেছেন যে, আইন মূলতঃ সামাজিক তথ্য ও বাস্তবতার উপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠিত। সামাজিক চাহিদা পূরণেই আইনের উদ্ভব। সুষ্ঠুভাবে একটি সমাজ পরিচালনার জন্য ন্যায়বিচার অপরিহার্য। আর ন্যায় বিচারপ্রতিষ্ঠা করার জন্য আইনবিজ্ঞান উপযুক্ত মাধ্যম। এই আইনবিজ্ঞান ও প্রকৌশলগত বিজ্ঞানের ন্যায় একটি প্রণালীবদ্ধ বিজ্ঞান। তাই এই উভয় বিজ্ঞানের তুলনা করে রস্কো পাউণ্ডের বক্তব্য যথার্থ হিসেবে বিবেচিত হয়।

Post a Comment

Leave a Comment.