বিদ্বেষ প্রসূত মামলা এবং কৃত্রিম বন্দীর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর


প্রশ্নঃ বিদ্বেষ প্রসূত মামলা এবং কৃত্রিম বন্দীর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর।

রশীদ হোটেলে অবস্থানকালে রাতে তার হোটেল কক্ষে ঘুমন্ত থাকা অবস্থায় হোটেলের রাত্রিকালীন কর্তব্যরত দারোয়ান ভুল বশতঃ তাকে তালাবদ্ধ করে আটকিয়ে রাখে। অপর একজন দারোয়ান সকালে রশীদ ঘুম হতে জেগে উঠার আগেই তালা খুলে দেয়। আইনগত অবস্থার পর্যালোচনা কর।

উত্তরঃ কৃত্রিম বন্দী ও বিদ্বেষ-প্রসূত মামলার মধ্যে পার্থক্যঃ কৃত্রিম বন্দী ও বিদ্বেষ-প্রসূত মামলার মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্যগুলি বিদ্যমানঃ 

(১) বৈধ কারণ ব্যতীত কোন ব্যক্তির চলাফেরার স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করলে কৃত্রিম বন্দী হয়।

যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে কারো বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করলে তাকে বিদ্বেষ প্রসূত মামলা বলে।

(২) কৃত্রিম বন্দীর ক্ষেত্রে বিবাদীর চলাফেরার་ স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণ রোধ করা হয়।

অপরপক্ষে, অপরপক্ষে, বিদ্বেষ-প্রসূত মামলার ক্ষেত্রে বাদীর বিরুদ্ধে অযথা ফৌজদারী আইন প্রয়োগ করা হয়।

(৩) বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার অনুমোদন ছাড়া কাউকে আটক করা কৃত্রিম বন্দী।

কিন্তু বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার অনুমোদনে কাউকে আটক করলে বিদ্বেষ-প্রসূত মামলার কারণ ঘটে।




style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">


(৪) বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেপ্তার করে বিচারকের সামনে উপস্থিত করলে কৃত্রিম বন্দীর উদ্ভব হয়।

কিন্তু বিচারকের সামনে উপস্থিত হবার পর আটক রাখা হলে বিদ্বেষ-প্রসূত মামলার প্রতিকার পাওয়া যায়৷ ছাড়া অষ্টিন বনাম ডাইলিং মামলায়-বিচারপতি উইস পার্থক্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ

তার কৃত্রিম বন্দী ও বিদ্বেষ-প্রসূত মামলার মধ্যে পার্থক্য একটা মোকদ্দমা দ্বারা ভাল বুঝা যায়। কোন পক্ষ যদি বিচারের জন্য কাউকে বিচারকের সম্মুখে উপস্থিত করে এবং অভিযোগ আনে, যার প্রেক্ষিতে বিচারক তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত উক্ত ব্যক্তিকে আটক রাখার নির্দেশ দেয়। এক্ষেত্রে যে অভিযোগ আনে তার বিরুদ্ধে কৃত্রিম বন্দীর মামলা চলেনা, কেননা সে নির্বাহী কর্মকর্তার পরিবর্তে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে কর্তব্যে প্রবৃত্ত করেছিল। অভিযোগ আনয়ন ও আটক এর মধ্যে সে কর্মকর্তার মতামত ও রায় অবস্থান করছে। নির্দেশে আটক এবং বিচারকের নির্দেশে আটক এর মধ্যে এরূপ প্রভেদ রেখা টানা যায়।




style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">


(৫) কোন পুলিশ কর্মকর্তা যদি কারো এজেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কারো নির্দেশে বা প্ররোচনায় গ্রেপ্তার করে তাহলে কৃত্রিম বন্দীর মামলা চলে।

পক্ষান্তরে, কোন পুলিশ কর্মকর্তা আইন প্রদত্ত স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাবলে কাউকে গ্রেপ্তার করলে তার প্রতিকার হচ্ছে বিদ্বেষ-প্রসূত মামলা।

(৬) কৃত্রিম বন্দীর ক্ষেত্রে বিবাদীর বিদ্বেষ (malice) প্রয়োজনীয় উপাদান নয়।

কিন্তু বিদ্বেষ-প্রসূত মামলায় বিবাদীর বিদ্বেষ প্রয়োজনীয় উপাদান ৷
(৭) কৃত্রিম বন্দীর ক্ষেত্রে বিবাদীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য প্রমাণ করতে হবে যে, বাদীর চলাফেরার অধিকার নিয়ন্ত্রণের যথার্থ কারণ ছিল। এরূপ প্রমাণে ব্যর্থ হলে তা বাদীর অনুকূলে যাবে। বাদীকে কোন কারণ প্রমাণ করতে হবে না।

বিদ্বেষ-প্রসূত মামলায় বাদীকেই প্রমাণ করতে হবে যে, সংশ্লিষ্ট ফৌজদারী মামলার যথার্থ ও সম্ভাব্য কারণ ছিল না।




style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">


(৮) কৃত্রিম বন্দীর ক্ষেত্রে বাদীর ক্ষতি (damage) মূখ্য বিষয় নয়। হ্যালসবেরীর (Halsbury) মতে কৃত্রিম বন্দীর সারবস্তু হচ্ছে শুধু বন্দী। বাদীকে প্রমাণ করতে হবে না যে, বন্দীটি ছিল অবৈধ বা বিদ্বেষমূলক। যদি সে প্ৰমাণ করতে পারে যে, বিবাদী তাকে বন্দী করেছিল- তাই যথেষ্ট তখন এই বন্দীর যথার্থ কারণ কি ছিল তা প্রমাণের দায়িত্ব বিবাদীর। বিদ্বেষ-প্রসূত মামলায় বাদীর ক্ষতি মূখ্য বিষয় এবং মামলার সারবস্তু। বাদীর সুনাম, প্রাইভেসী, আর্থিক, মানসিক বা শারীরিক ক্ষতি এর অন্তর্ভূক্ত।

(৯) কৃত্রিম বন্দীর ক্ষেত্রে টর্টের প্রতিকার ছাড়াও সাংবিধানিক আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়৷ সাংবিধানিক বিদ্বেষ-প্রসূত মামলার ক্ষেত্রে বাদী টর্টের প্রতিকার ছাড়াও ফৌজদারী আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।




style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">


রশীদ হোটেলে অবস্থানকালে রাতে তার হোটেল কক্ষে ঘুমন্ত থাকা অবস্থায় হোটেলের রাত্রিকালীন কর্তব্যরত দারোয়ান ভুল বশতঃ তাকে তালাবদ্ধ করে আটকিয়ে রাখে। অপর একজন দারোয়ান সকালে রশীদ ঘুম হতে জেগে উঠার আগেই তালা খুলে দেয়। আইনগত অবস্থার পর্যালোচনাঃ
 বৈধ কারণ ব্যতীত কারো চলাফেরার স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করলে কৃত্রিম বন্দীর (False imprisonment) জন্য দায়ী হতে হয় । চলাফেরার স্বাধীনতা রোধ হয়েছে এটা সে সময়ে বিবাদী না জানলেও চলে । তাই ঘুমন্ত অবস্থায় 'ক' এর ঘর বন্ধ করে রাখা এবং জেগে ওঠার আগে তা ‘ক' খুলে দেয়া কৃত্রিম বন্দীর সামিল। অবশ্য এক্ষেত্রে কিছুটা মত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। Herring Vs Royle [(1834) I or M. & R 377 )] মামলার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিবাদী বদি বুঝতে না পারে যে, তার চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, তাহলে সে কৃত্রিম বন্দীর মামলা করতে পারে না৷ কিন্তু অধিকাংশ আদালতের মত অনুসারে এক্ষেত্রে কৃত্রিম বন্দীর মামলা চলে৷

Post a Comment

Leave a Comment.