ভূমিকাঃ যে কোন বৃহদায়তন সংগঠনেই কর্তৃত্ব অর্পণের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব রয়েছে। কারণ কোন একক ব্যক্তির পক্ষেই সেখানে সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা কার্যত সম্ভব নয়। কর্তব্য বণ্টনের সাথে সাথে প্রয়োজনীয় কর্তৃত্ব ও অন্যান্য ব্যক্তিগণের নিকট অর্পণ করতে হবে।
কর্তৃত্ব অর্পণের প্রয়োজনীয়তা (The Necessity For Delegation of Authority): যে সকল বাস্তব পরিস্থিতি ও সুবিধার কারণে প্রশাসনিক অধিকর্তা তার অধস্তন কর্মকর্তাগণের নিকট কর্তৃত্ব অর্পণ করেন, সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলোঃ
প্রথমত, প্রশাসনিক সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ কর্তৃত্ব অর্পণের ফলে অধিকতর উপযুক্তভাবে নিজেদের সময় ও কর্মশক্তি নিয়োগ করতে পারেন। কোন প্রশাসনিক প্রধানই তার উপর আইনগতভাবে ন্যস্ত সকল কর্তৃত্ব চর্চা করতে পারেন না। আধুনিক প্রশাসনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ব্যবস্থাপক বা পরিচালক খুঁটিনাটি বিষয়াদির ব্যাপারে ভাবনা চিন্তা করে অবশ্যই তার সময় ও কর্মশক্তির অপচয় করতে পারেন না এবং তিনি প্রশাসনের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাদি সম্পর্কেই কেবল সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা নিতে পারেন। তাছাড়া অধস্তন কর্মকর্তাগণের নিকট কর্তৃত্ব অর্পণ না করা হলে তারা তাদের নির্ধারিত কাজ সম্পাদন করতে অসমর্থ হবে, কারণ কোন কাজ করার দায়িত্ব সেই কাজ করার কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা থাকার কথাও ইঙ্গিত করে। অধস্তন কর্মকর্তাগণের কাজ পরিদর্শন, তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করার চূড়ান্ত ক্ষমতা কর্তৃত্ব অর্পণ কারী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার হাতেই বজায় থাকবে। তথাপি প্রশাসনের প্রাত্যহিক কার্যাবলি রুটিন মাফিক উপায়ে চালিয়ে যাওয়ার ভার যাদের উপর ন্যস্ত, তাদেরকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার এবং সে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে দায়ী থাকার কর্তৃত্ব অর্পণ সমগ্র প্রশাসন-যন্ত্রের পক্ষে কল্যাণকর বলে প্রতীয়মান হবে।
crossorigin="anonymous">
style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">
দ্বিতীয়ত, প্রশাসনিক সংগঠনের কর্মচারীগণ যখন ঊর্ধ্বতন মহল হতে সুষ্ঠু ও পরিপূর্ণভাবে কর্তৃত্ব লাভ করেন, তখন তাদের দায়িত্ববোধ ও কার্যদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। কর্তত্ববিহীন কর্মচারীগণের দায়িত্ববোধ ক্ষুণ্ণ হয়। প্রতিটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তই যদি ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কর্মচারীগণের দ্বারা প্রণীত হয়, তাহলে নিম্নপর্যায়ের কর্মচারীগণ নিজেদের কর্তৃত্ব ক্ষুণ্ণ বা বিনষ্ট হয়েছে বলে আশঙ্কা বোধ করবেন। মূলকথা হলো এই যে, কর্মচারীগণকে তাদের কাজের ব্যাপারে একদিকে যেমন অবশ্যই দায়ী রাখা হবে, তেমনি অপরদিকে তাদেরকে অবশ্যই সিদ্ধান্ত গ্রহণের যথোচিত পরিমাণ কর্তৃত্ব অর্পণ করতে হবে। আর তাহলেই তারা স্বীয় কার্যাদি দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে সম্পাদন করতে সচেষ্ট হবেন।
তৃতীয়ত, যদি প্রশাসনিক কর্তৃত্ব নিম্নতর পর্যায়ে অর্পণ না করা হয়, তাহলে প্রশাসনিক বিষয়াদি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজে অনুচিত বিলম্ব হতে পারে। সে দিক দিয়ে বিচার করা হলে, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কর্তৃত্ব অর্পণ এরূপ বিলম্বের সম্ভাবনা ফলপ্রসূভাবে কমিয়ে ফেলবে।
crossorigin="anonymous">
style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">
চতুর্থত, প্রশাসনের প্রত্যেক স্তরের কর্মচারীগণের নিকট সঠিক ও উপযুক্তভাবে কর্তৃত্ব ন্যস্তকরণের ফলে তাঁদের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য সুস্পষ্টভাবে নির্দেশিত হয়। ফলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রশাসনিক কার্যাবলি কার্যকরভাবে পরিদর্শন, তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণ ও পর্যালোচনা করতে সক্ষম হতে পারেন।
পঞ্চমত, প্রশাসনিক বিভাগের যে সকল কর্মী মফস্বল বা ফিল্ডে কাজ করছেন তাদের নিকট সিদ্ধান্ত গ্রহণের কর্তৃত্ব অর্পণের ফলে, তাঁরা স্থানীয় পরিস্থিতির সাথে প্রশাসনিক নীতি ও কার্যসূচিকে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন। ফলে জনসাধারণের প্রতি প্রদত্ত প্রশাসনিক সার্ভিসের মান উন্নত হয় ও অর্থের অপচয় কম হয় ৷
পরিশেষঃ এল. ডি. হোয়াইট (L. D. White) কর্তৃত্ব অর্পণের কারণসমূহ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “পরিস্থিতির বিরাটত্ব ও ব্যাপকতার কারণে অবশ্য কর্তৃত্ব কিছু মাত্রায় অর্পণ করা ও যেখানে উদ্ভূত হয় সেখানেই সমস্যার অনেকখানি সমাধান করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। নাগরিকগণের সুবিধার কারণেই কেবল অধিকাংশ বিষয় সম্পর্কে ওয়াশিংটনের বাইরে সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব পরিহার করতে হলে কোন এক সদর দপ্তরের চেয়ে বরং একশত বা একসহস্র ফিল্ড অফিসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন। কোন কোন ক্ষেত্রে স্থানীয় পরিস্থিতির সাথে নীতি ও কার্যসূচিকে সঠিকভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হলে ফিল্ড অফিসগুলো কর্তৃক স্ব-বিবেচনামত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। কর্তৃত্ব অর্পণ সুনিশ্চিতভাবেই ফিল্ড এজেন্টগণের মধ্যে অধিকতর কর্মশক্তি, উচ্চতর মাত্রায় দায়িত্ববোধ এবং উন্নততর মনোবলের সৃষ্টি করে। তারা তাদের ওয়াশিংটনস্থ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের শুধুমাত্র বার্তাবহ ও রিপোর্টার হয়েই সন্তুষ্ট নন।”
Post a Comment