পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে ভূগোলের সম্পর্ক আলোচনা কর


প্রশ্নঃ 
পৌরনীতি ও সুশাসন এবং ভূগোল এর সম্পর্ক আলোচনা কর। 

ভূমিকাঃ পৌরনীতি ও সুশাসন হলো সামাজিক বিজ্ঞান। সমাজবদ্ধ মানুষের আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি, আশা-আকাঙ্ক্ষা, কার্যাবলি ইত্যাদি বিষয় পৌরনীতির আলোচনার বিষয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞান প্রভৃতি অপর সামাজিক বিজ্ঞানগুলোও মানুষের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন নিয়ে আলোচনা করে। সুতরাং সব সামাজিক বিজ্ঞানই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। শুধু তাই নয়— দর্শন, মনোবিজ্ঞান, নীতিশাস্ত্র প্রভৃতি নৈতিক বিজ্ঞানের সাথেও পৌরনীতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। জ্ঞানের এই মূল্যবান শাখাগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

পৌরনীতি ও সুশাসন এবং ভূগোল (Civics, Good Governance and Geography): পৌরনীতি ও সুশাসন এবং ভূগোল পরস্পর গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। পৌরনীতি ও সুশাসন মূলত নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। নাগরিক, সমাজ, রাষ্ট্রের আচরণ ও কার্যাবলি নিয়ে পৌরনীতি ও সুশাসন আলোচনা করে। অপরদিকে রাষ্ট্রের ভূখণ্ড, জনসংখ্যা, পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ, খনিজ পদার্থ, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও ভূপ্রকৃতির সুসংবদ্ধ অধ্যয়নই ভূগোল। জ্ঞানের এই উভয় শাখার সম্পর্ক নিম্নরূপঃ

পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে ভূগোলের সাদৃশ্যঃ




style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">


১. ভূখণ্ডগতঃ
রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ভূখণ্ড। রাষ্ট্র গড়ে ওঠে ভূমির ওপর, আকাশে বা বাতাসে নয় । রাষ্ট্রের সমৃদ্ধিও নির্ভর করে জমির উর্বরতা, খনিজ সম্পদ প্রভৃতির ওপর। নাগরিকদের চরিত্র গঠনেও নদী, সমুদ্র, পাহাড়, ভূপ্রকৃতি ও প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব অপরিসীম। সুতরাং পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠে ভূগোলের প্রভাব অপরিসীম। 

২. পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতাঃ ভূগোল আর্থিক সম্পদ, নগরের উৎপত্তি, রাষ্ট্রের আয়তন এবং কৃষি ও খনিজ সম্পদ সম্পর্কে আলোচনা করে থাকে। একটি রাষ্ট্রের মঙ্গল-অমঙ্গল ও সমৃদ্ধির সাথে এগুলোর সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুতরাং ভূগোল এবং পৌরনীতি ও সুশাসনের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।

৩. রাষ্ট্রের কল্যাণ ও জাতীয় সমৃদ্ধিঃ পৌরনীতি ও সুশাসন রাষ্ট্রের কল্যাণ সম্পর্কে আলোচনা করে থাকে। রাজধানী কোথায় স্থাপিত হলে, শিল্পকেন্দ্র কোথায় কোথায় স্থাপিত হলে রাষ্ট্রের অধিক কল্যাণ বা মঙ্গল সাধিত হবে ভূগোল সে সম্পর্কে আলোচনা করে। এমনকি নদ-নদী ও সমুদ্র সম্পদকে কীভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে ভূগোল সে সম্পর্কেও আলোচনা করে থাকে। সুতরাং রাষ্ট্রের কল্যাণ তথা জাতীয় সমৃদ্ধির স্বার্থেই ভূগোল এবং পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠ করা প্রয়োজন।




style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">


৪. জনজীবনে প্রভাবঃ
 ভৌগোলিক অবস্থান ও ভৌগোলিক পরিবেশ একটি জনগোষ্ঠীর জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলে থাকে। এরিস্টটল, জ্যা বোঁদা, মন্টেস্কু, ইবনে খালদুন প্রমুখ মনীষী বলেছেন যে, ভৌগোলিক অবস্থান ও ভৌগোলিক পরিবেশ মানুষের সাহসিকতা, ধৈর্য, বুদ্ধিবৃত্তি, কর্মস্পৃহা প্রভৃতির ওপর প্রভাব সৃষ্টি করে থাকে।

৫. জাতীয় ও পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণেঃ একটি দেশের জাতীয় নীতি ও পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে জ্ঞানের এই দুটি শাখারই রয়েছে সাদৃশ্য। জাতীয় ও পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে পৌরনীতি ও সুশাসনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়। জাতীয় ও পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব অনস্বীকার্য। বর্তমান সময়ে একারণেই ভূ-রাজনীতি (Geopolitics) নামে একটি নতুন বিষয়ের উদ্ভব ঘটেছে। বর্তমান সময়ে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতি, জাতীয় স্বার্থ চিহ্নিতকরণ ও পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে ভৌগোলিক উপাদানসমূহকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়।

৬. জাতীয়তাবাদ এবং জাতীয় রাষ্ট্রের বিকাশেঃ পৌরনীতি ও সুশাসনে জাতি, জাতীয়তা ও জাতীয় রাষ্ট্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়ে থাকে। জাতীয়তাবাদী চেতনা প্রসারের ফলেই পৃথিবীতে জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছে। একই ভূ-খণ্ডে বসবাসকারী জনসমাজের মধ্যেই প্রথমে ঐক্যবোধ এবং তা থেকে জাতীয়তাবোধের চেতনা জাগ্রত হয়। জাতীয়তাবোধ এবং জাতীয় রাষ্ট্রের বিকাশে ভৌগোলিক অবস্থান ও পরিবেশের প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।




style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">


পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে ভূগোলের পাৰ্থক্যঃ

১. অধ্যয়ন পদ্ধতির ক্ষেত্রে পার্থক্যঃ পৌরনীতি ও সুশাসনের অধ্যয়ন পদ্ধতি ঐতিহাসিক ও বিশ্লেষণধর্মী কিন্তু ভূগোলের অধ্যয়ন পদ্ধতি গাণিতিক ও ঐতিহাসিক।

২. বিষয়বস্তুগত পার্থক্যঃ উভয়ের মধ্যে বিষয়বস্তুগত পার্থক্য রয়েছে। যেমন- ভূপ্রকৃতিগত বিষয়সমূহ-যেমন ভূমিরূপ, সৌরজগৎ, শিক্ষা ও খনিজ প্রভৃতি পৌরনীতি ও সুশাসনকে আলোচ্য বিষয় নয়। তেমনি নাগরিকতা, অধিকার ও কর্তব্য, সংবিধান, আইন, স্বাধীনতা, জনমত, রাজনৈতিক দল প্রভৃতি বিষয় ভূগোলের আলোচ্য বিষয় নয়।

পরিশেষঃ তবে উভয়ের মধ্যে উপরে বর্ণিত পার্থক্য সত্ত্বেও বলতে হয় যে, পৌরনীতি ও সুশাসন এবং ভূগোল ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। বিশেষ করে ভূগোল নানাভাবে পৌরনীতি ও সুশাসনকে সমৃদ্ধ করে থাকে। একটি রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা জাতীয় স্বার্থ, জাতীয় নীতি ও পররাষ্ট্রনীতি ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যর ও অবস্থানের উপর নির্ভরশীল।

Post a Comment

Leave a Comment.