পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে নীতিশাস্ত্রের সম্পর্ক আলোচনা কর


প্রশ্নঃ 
পৌরনীতি ও সুশাসন এবং নীতিশাস্ত্র এর সম্পর্ক আলোচনা কর। 

ভূমিকাঃ পৌরনীতি ও সুশাসন হলো সামাজিক বিজ্ঞান। সমাজবদ্ধ মানুষের আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি, আশা-আকাঙ্ক্ষা, কার্যাবলি ইত্যাদি বিষয় পৌরনীতির আলোচনার বিষয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞান প্রভৃতি অপর সামাজিক বিজ্ঞানগুলোও মানুষের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন নিয়ে আলোচনা করে। সুতরাং সব সামাজিক বিজ্ঞানই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। শুধু তাই নয়— দর্শন, মনোবিজ্ঞান, নীতিশাস্ত্র প্রভৃতি নৈতিক বিজ্ঞানের সাথেও পৌরনীতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। জ্ঞানের এই মূল্যবান শাখাগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

পৌরনীতি ও সুশাসন এবং নীতিশাস্ত্র (Civics, Good Governance and Ethics): নাগরিকতা ও জাতীয় রাষ্ট্রের রাজনৈতিক দিক নিয়ে যে শাস্ত্র আলোচনা করে তাকে পৌরনীতি ও সুশাসন বলে। অপরদিকে মানুষের যাবতীয় কার্যাবলি এবং আচার-আচরণের ভালো-মন্দ নিয়ে যে শাস্ত্র আলোচনা করে তাকে নীতিশাস্ত্র বলে। পৌরনীতি ও সুশাসন এবং নীতিশাস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে নীতিশাস্ত্রের সাদৃশ্যঃ পৌরনীতি ও সুশাসন এবং নীতিশাস্ত্রের মধ্যে সাদৃশ্য নিম্নরূপঃ



style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">


১. উভয়ের লক্ষ্য একঃ
 পৌরনীতি ও সুশাসন এবং নীতিশাস্ত্রের লক্ষ্য হলো এক এবং তা হলো আদর্শ মানুষ গড়ে তোলা। প্লেটো ও এরিস্টটল রাষ্ট্রকে উত্তম জীবনযাপনের জন্য সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয় সংগঠন বলে উল্লেখ করেছেন। পৌরনীতি ও সুশাসনের লক্ষ্য হলো সুনাগরিক সৃষ্টি করা। নীতিশাস্ত্র কোটা সৎ, কোটা অসৎ, কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ; কোন্‌টা উচিত, কোটা অনুচিত এ শিক্ষা প্রদান করে সুনাগরিক সৃষ্টি করতে সাহায্য করে থাকে। লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে তাই উভয় শাস্ত্রই একে অপরকে সাহায্য করে।

২. উভয়ের ভিত্তিমূল একঃ পৌরনীতি ও সুশাসনের অনেক বিষয়েরই ভিত্তিমূল হলো ন্যায়নীতি। রাষ্ট্রীয় সংগঠন বিকশিত হবার প্রাথমিক পর্যায়ে প্রচলিত ন্যায়নীতি এবং আইনের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য ছিল না। মানব সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে রাষ্ট্রীয় সংগঠন পূর্ণরূপ লাভ করে এবং অতীতের অনেক ন্যায়-নীতিই আইনে পরিণত হয়। এ জন্য পণ্ডিতগণ বলেন যে, ন্যায়নীতির ভিত্তিমূল থেকেই আইন, রাষ্ট্র প্রভৃতি গড়ে ওঠেছে।

৩. একে অপরের পরিপূরকঃ পৌরনীতি ও সুশাসন এবং নীতিশাস্ত্র একে অপরের পরিপূরক ও সহায়ক। নৈতিক আদর্শগুলো জনগণ কর্তৃক স্বীকৃত হলে তা রাষ্ট্রীয় আইনে পরিণত হয়। কোনো রাষ্ট্রীয় আইন নৈতিকতা সম্মত না হলে তা জনসমর্থন পায় না। ফকস্ এ জন্যই বলেছেন যে, “ন্যায়নীতির দৃষ্টিকোণ থেকে যা অন্যায়, তা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক বা ন্যায় হতে পারে না” (What is morally wrong can never be politically right.)।




style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-3850092454288730"
data-ad-slot="2569077421">


পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে নীতিশাস্ত্রের পার্থক্যঃ
উভয় শাস্ত্রের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ

১. বিষয়বস্তুগতঃ নীতিশাস্ত্রের বিষয়বস্তু ও পরিধি পৌরনীতি ও সুশাসনের বিষয়বস্তু ও পরিধি অপেক্ষা ব্যাপকতর। নীতিশাস্ত্র মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণ (External actions) এবং অভ্যন্তরীণ আচার-আচরণ (Internal actions) নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু পৌরনীতি ও সুশাসন শুধু মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণ নিয়ে আলোচনা করে থাকে।

২. দৃষ্টিভঙ্গিজনিতঃ অনেক সময় দেখা যায় যে, নৈতিক দিক থেকে অন্যায় নয় এমন অনেক কাজ রাষ্ট্রীয় আইনে অন্যায় বিবেচিত হয়। যেমন— রাস্তার বামদিক দিয়ে অসংযতভাবে গাড়ি চালানো নৈতিকতা বিরুদ্ধ নয় কিন্তু তবুও রাষ্ট্রীয় আইনে তা বেআইনি। আবার অনেক নৈতিকতা বিরুদ্ধ কাজ আইন বিরুদ্ধ নাও হতে পারে। যেমন- পরনিন্দা, মিথ্যা কথা বলা প্রভৃতি নৈতিকতা বিরুদ্ধ হলেও যতক্ষণ তা অন্যের ক্ষতি করেনি ততক্ষণ তা আইন বিরুদ্ধ নয়। সুতরাং পৌরনীতি ও সুশাসন এবং নীতি শাস্ত্রের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিজনিত পার্থক্য রয়েছে।

পরিশেষঃ পৌরনীতি ও সুশাসন এবং নীতিশাস্ত্রের মধ্যে যত পার্থক্যই থাক না কেন উপসংহারে একথা বলা যায় যে, উভয় শাস্ত্রই একে অপরের পরিপূরক এবং উভয়ের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ ও নিবিড়। জ্ঞানের এই উভয় শাখাই আদর্শ মানুষ গড়ে তুলতে চেষ্টা করে।

Post a Comment

Leave a Comment.